চুলকানি কি ?
ইহা চর্মের দীর্ঘকাল স্হায়ী ক্রনিক রোগ।পরিচ্ছন্নতার অভাব,অপরিষ্কার বস্ত্রাদি পরিধান,অধিক গুরুপাক ও অপুষ্টিকর খাদ্য ভক্ষণ,প্রভৃতি কারণে উদ্ভেদ সহ বা উদ্ভেদ বিহীন অবস্থায় প্রকাশ পায়।স্ত্রীপূরুষ,নির্বিশেষে সকলের সর্ব বয়সেই ইহা দেখা যায়,অতিশয় ছোট শিশুদের প্রায়ই হয় না।ইহার উদ্ভেদ যু্ক্ত শ্রেণীকে প্রুরিগো এবং উদ্ভেদ বিহীন শ্রেণীকে প্রুরিটাস বলা হয়।
প্রুরিগো-চর্মের উপর সচরাচর প্রথমত হস্ত,পদ এবং পৃষ্ঠদেশে স্বাভাবিক চর্মের বর্ণ বিশিষ্ট বা ঈষৎ রক্তাভ দুই একটি করিয়া অতি ক্ষুদ্র উদ্ভেদ প্রকাশ পাইয়া ভয়ানক চুলকায় এবং চুলকাইলে সামান্য রক্তপাত হইয়া শুকাইয়া শুষ্ক ক্ষুদ্র মামড়ী পড়ে কিন্তু চুলকানির নিবৃত্তি হয় না।ক্রমশ উদ্ভেদ গুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়া অঙ্গাদি ছাইয়া ফেলে কখন কখন মলদ্বার,লিঙ্গ,অন্ডকোষ,ষোনি-কপাট,প্রভৃতি আক্রমণ করে এবং দুর্বিসহ চুলকানির যাতনায় রোগী অস্থির হইয়া উঠে,বসন্ত,গ্রীষ্মকালে ইহা অন্তর্হিত হয় বা হ্রাস পায় এবং বর্ষা ও শীত সমাগমে পুনরায় আক্রমণ করে।
প্রুরিটাস- এই জাতীয় রোগে চর্মের উপর কোন উদ্ভেদ বা প্রদাহ থাকে না।প্রায় বিনা কারণেই সর্বশরীরে নিদারুণ চুলকানির প্রকোপ জীবন দুর্বিসহ হইয়া উঠে।বহুমুত্র,ব্রাইটস্ ডিজিজ,পিত্তাধিক্য,যকৃতের সিরোসিস,প্রভৃতি রোগ সহ এবং কখন কখন গর্ভবতী রমনীর এইরুপ চুলকানি হইতে দেখা যায়।চর্মের সজীবতা ও মেদ নষ্ট হইলে তাহা শুষ্ক ও কর্কশ হইয়া চুলকানি প্রকাশ পায়।বার্ধক্যবশত এবং অত্যন্ত ঠান্ডা বা গরম জলে স্নান করিবার ফলেও এইরুপ হইতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
নিম্নে বর্ণনায় শুধুমাত্র পার্থক্যকারী বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে।প্রতিটি ঔষধের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঔষধের মানসিক,দৈহিক লক্ষণসহ সকল নির্বাচক লক্ষণ বিবেচ্য।লেখার সারসংক্ষেপ দেয়া হয়েছেমাত্র।
এলুমিনাঃ-চর্ম শুষ্ক ও কর্কশ,সর্বশরীরে অসহনীয় চুলকানি,চর্ম ফাটিয়া রক্তপাত হইয়া বেদনা হয়,কিন্তু চুলকানি হ্রাস পায় না এর সাথে এলুমিনার নির্বাচক লক্ষণ বিদ্যমান থাকলে উপযোগী।।
এমন কার্ব-সর্বশরীর চুলকায় ও তৎপরে জ্বালাময় ফুষ্কুরি বাহির হয়,চুলকানী বশতঃ নিদ্রা হয় না,চুলকাইলে আরাম বোধ হয় সে রোগীর জন্য এমন কার্ব উপযোগী।
আর্জেন্ট মেট ও আর্জন্ট নাইট্রিকাম-সর্বশরীরে বিশেষত উরু বা বগলে সড়-সড় করে ও চুলকায়,চুলকাইলেও সড়-সড়ানি নিবৃত্ত হয় না সেই রোগীর জন্য উপযোগী।
ক্যালেডিয়াম সেগা-অন্ত:সত্ত্বাবস্থায় যোনি-কপাটে চুলকানি স্থানকাল বিবেচনা শুষ্ক হইয়া যোনি চুলকাইতে থাকে, অন্ডকোষে চুলকানি উদ্ভেদ চুলকাইতে চুলকাইতে হস্থমৈথুন করিয়া ফেলে এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
কষ্টিকাম-সর্বশরীরে,নাকে,মুখে,বাহুতে,করতলে পদপৃষ্ঠে,পৃষ্ঠদেশে দুর্বিসহ চুলকানি,নিদ্রা হয় না এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী ।
চেলিডোনিয়াম-সর্বশরীরে চুলকানি।ক্রোটন টিগ অতিব চুলকানি,ধীরে ধীরে চুলকাইলে উপশম হলে এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
ডেলিকস্-কোন প্রকার উদ্ভেদ থাকে না,কেবলই চুলকায়।আদৌ ঘুম হয় না,চুলকানিসহ কোষ্ঠবধ্যতা,ন্যাবা।চুলকানির নিবৃত্তি হয় না,রাত্রিকালে বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
ফ্যাগোপাইরাম-সর্বশরীরে অসহনীয় চূলকানি।গাত্র স্পর্শ করিলে শয়ন করলে বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
গ্রাফাইটিস- ঋতুস্রাবের পূর্বে যোনি চুলকায়,দিবারাত্র সর্বশরীর চূলকায়,চূলকাইবার পর গাত্রে চাকা চাকা দীর্ঘ দাগ হয় এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
হিপার সাল্ফ-সর্বশরীর,বিশেষত অঙ্গুলি-সন্ধি কুটকুট করে ও চুলকায় এবং চুলকাইবার পর শ্বেতবর্ণ ফুষ্কুরি জন্মে,চর্মে সামান্য আচড় লাগিলেই পূজ হয় এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী ।
ক্রিয়জোট-সন্ধ্যা কালে চুলকানি এইরুপ নিদারুন হইয়া উঠে যে তার জন্য রোগী অস্থির হইয়া উঠে এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী ।
লিডাম-হস্ত পদে কব্জি ও পদপৃষ্ঠে অতি চূলকানি,বিছানার গরমেও চুলকানি বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
লাইকোপোডিয়াম-দিনে চুলকানি বৃদ্ধি,শরীর উত্যপ্ত হইলেই কুটকুট করে ও চুলকায় এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
মার্কসল ও ভাইভাস-দিনে কাজ করার সময় শরীর উত্যপ্ত হইলে প্রচুর চুলকানি উপস্থিত হইয়া অস্থির করিয়া তুলে।রাত্রিকালে ও শয্যার উত্তাপে চুলকানির বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
মেজেরিয়াম-শরীরের অংশবিশেষে প্রচন্ড চুলকানি,রক্তপাত হইল্ওে চুলকানির নিবৃত্তি হয় না,সন্ধায় ও রাত্রি কালেও উত্যাপে বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
নেট্রাম মিউর-দিবাভাগে চুলকানি বৃদ্ধি,অতিরিক্ত পরিশ্রম করিবার পর চুলকানি বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
নেট্রাম সালফ-পরিধেয় বস্রাদি ত্যাগ করিলেই অন্ডকোষ,উরু প্রভৃতি স্থানে অতি চুলকানি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
পেট্রোলিয়াম-অন্ডকোষ,উরু,পেরিনিয়াম,স্ত্রী-জননেন্দ্রিয় প্রভৃতি স্থানে অসহ্য চুলকানি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
প্লাটিনা-সর্বশরীরে এমনকি যোনি,জরায়ু,প্রভৃতি স্থানে বিবেক লোপকারী চূলকানি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী ।
সোরিনাম-দারুন চূলকানি,রাত্রিকালে শয্যার উত্তাপে বৃদ্ধি হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়।নিদ্রা হয় না,আচড়াইয়া রক্তপাত করিলে উপশম এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
রিউমেক্স-রিধেয় বস্রাদি ত্যাগ করিলেই চুলকানি বৃদ্ধি ঠান্ডা ও ঠান্ডা বাতাসে বৃদ্ধি উত্তাপে উপশম এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী।
সালফার-সর্বপ্রকার চর্মরোগের শ্রেষ্ঠ ঔষধ।পুরাতন চুলকানি রোগ,চুলকাইতে আরাম বোধ হয় ও শরীর রোমাঞ্চিত হয়,কিন্তু পরে লজ্জা হয়,সন্ধা কালে ও শয্যার উত্যাপে বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে ঊপযোগী ।